স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারণে অকারণে এলাকার নিরিহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও দেশত্যাগের হুমকির মুখে কয়েকটি পরিবার এখন দু’ভাইয়ের কাছে জিম্মি হয়ে পরেছেন। ঘটনাটি জেলার গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া গ্রামের। অভিযুক্ত কথিত আওয়ামী লীগ নেতা দাবিদার ওই দুই ভাইয়ের নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন ও হুমকির ঘটনায় থানায় একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও কোন প্রতিকার পায়নি ভূক্তভোগীরা। ফলে দিন দিন ওই দুই ভাই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ ১০ মে (সোমবার) মাসুদ মীর ও মাসুম মীর নামের ওই দুই ভাইয়ের হামলার স্বীকার হয়ে ৯৯৯ ফোন করে প্রাণেরক্ষা পেয়েছেন তিন যুবক। মঙ্গলবার সকালে নলচিড়া গ্রামের মৃত নিমাই চন্দ্র দাসের পুত্র আওয়ামী লীগ কর্মী মনতোষ দাস জানান, একই গ্রামের জালাল মীরের পুত্র মাসুদ মীর কারনে অকারণে নলচিড়া বাজারে বসে স্থানীয় হিন্দু নেতা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রদীপ কুমার দুলু নাগকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কটুক্তি করে। এ ঘটনার তিনি প্রতিবাদ করায় মাসুদ মীরের সাথে তার বাগ্বিতন্ডা হয়। ওই ঘটনার জেরধরে মাসুদ মীর ও তার ভাই উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী মাসুম মীর তাকে দেশত্যাগের হুমকি প্রদর্শন করে। মনতোষ দাস আরও জানান, তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে তিনি অদ্যবর্ধি চারবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও রহস্যজনক কারণে কোন সুফল পাননি। বরং থানায় অভিযোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুদ মীর ও তার ভাই মাসুম মীর তাকে (মনতোষ দাস) মারধরের জন্য নলচিড়া বাজারে বসে একাধিকবার ধাওয়া করে। একপর্যায়ে হামলার ভয়ে ও দু’ভাইয়ের হুমকির মুখে দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়িয়ে মনতোষ সম্প্রতি নিজ এলাকায় ফিরে আসলে তাকে পূর্ণরায় দেশত্যাগের হুমকি প্রদর্শন করে মাসুদ ও মাসুম মীর। এ ঘটনায়ও চলতি মাসের প্রথমার্ধে উল্লেখিত দুইভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুদ ও মাসুম মীর ১০ মে সকালে মনতোষ দাসের স্বজন ইজিবাইক চালক অশোক মালীর ওপর নলচিড়া বাজারে বসে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। এসময় তাকে (অশোক) রক্ষায় অপর ইজিবাইক চালক আজিজ হাওলাদার ও স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল জমাদ্দার এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আজিজের ইজিবাইকের চাবি এবং অশোক মালীর সাথে থাকা ইজিবাইকের ব্যাটারী ক্রয়ের ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। সূত্রমতে, দু’ভাই ও তাদের সহযোগিদের হামলার একপর্যায়ে প্রাণরক্ষা করতে রবিউল জমাদ্দার ৯৯৯ ফোন করলে তাৎক্ষনিক গৌরনদী মডেল থানার এসআই সুশান্ত কুমার ঘটনাস্থলে পৌঁছলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোমবার (১০ মে) সন্ধ্যায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর হামলাকারীরা পূর্ণরায় হুমকি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, হামলাকারীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে দুই ভাই ও তাদের সহযোগিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে অসহায় মনতোষ দাসসহ হামলার শিকার অন্যান্য ভূক্তভোগিরা প্রভাবশালী দু’ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অভিযুক্ত মাসুদ ও তার ভাই মাসুম মীরের সাথে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে গৌরনদী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, চলতি মাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের করা দুইটি অভিযোগের তদন্ত করে অনতিবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply